৩০ মে ১৯৮১’র সকাল! আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হলের ১১১/গ (গনভবন বলে পরিচিত) কক্ষের আবাসিক ছাত্র। নিকটবর্তী হল গেট থেকে আর্তনাদ ও চিৎকারের শব্দ ভেসে আসতেই ছুটলাম সেদিকে। সেখানে গিয়ে যা শুনলাম ও দেখলাম তাতে বিস্মিত, বাকরুদ্ধ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ!
আমার প্রিয় নেতা, মাত্র কিছুদিন আগেই যাঁর হাত ধরে আমি ছাত্রদল ঢাবি শাখার প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি, তাঁকে কতিপয় দুর্বৃত্ত সেনা-সদস্য চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নির্মমভাবে হত্যা করেছে! একটা সময়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। চিৎকার করে কান্না শুরু করলাম ১৯ বছর বয়সী কিশোর সেই আমি। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। এতোটা কষ্ট যা ভাষায় প্রকাশ করা মতো না। শুধু আমি নই আমার মতো হাজারো যুবক বৃদ্ধ আপামর জনতার মন ভেঙে গিয়েছিলো সেদিন। শহর-থেকে গ্রাম সবখানেই মানুষের মনে আকাশ ভেঙে পড়েছিলো। সকলের আপনজন প্রিয় নেতার মৃত্যুতে আমার মতো অনেকেই চিৎকার করে কেঁদেছিলো। পুরো বাংলাদেশ কেদেছিলো।
তারপর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের বাংলাদেশের সব কিছুই এক একটি কষ্টদায়ক ইতিহাস! আজ বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে শামিল হয়ে সকালে গিয়েছিলাম আমার প্রাণপ্রিয় নেতা শহীদ জিয়ার মাজারে। কেন জানি মনে হচ্ছিল, এগুলো এমন সব আনুষ্ঠানিকতা যেখানে একান্তে নিজের আবেগ এবং অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ খুব কম।
তাই জুম্মার নামাজ পড়ে নিভৃতে, একাকী এসেছিলাম আমার প্রিয় নেতার মাজারে। সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস ও দরূদ শরীফ পাঠের পর একান্ত মনের কিছু প্রার্থনা জানালাম আল্লাহর দরবারে।
ইয়া রাব্বুল আল-আমিন! সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সূচনাকারী তোমার এই বান্দাকে জান্নাতবাসী করো। পাশাপাশি তাঁর রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজগুলো সুসম্পন্ন করার মতো তৌফিক তুমি আমাদেরকে দান করো মা’বুদ! আমিন!
লেখক: সাবেক ডিআইজি, বিএনপির পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব।