উল্লাপাড়ার শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্জাগরণের নেপথ্যে কর্মবীর ছানোয়ার হোসেন

ছবি: শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন।

২০২২ সালের শুরুর দিকে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে নেমে আসে এক অন্ধকার অধ্যায়। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে একযোগে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সকল কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়, কেবল একজন কর্মকর্তা ব্যতীত। ফলে অফিস কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে এবং উল্লাপাড়ার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছয়জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে উল্লাপাড়ায় বদলি করে আনা হলেও, কেউই সেই সময়ের প্রতিকূল পরিবেশে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি।

এমন সংকটময় মুহূর্তে দীর্ঘ তিন মাস পর দায়িত্ব পান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ছানোয়ার হোসেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম, দূরদর্শিতা ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে একেবারে শূন্য অবস্থা থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা জোগান। তিনি প্রতিটি বিদ্যালয় নিজে পরিদর্শন করে শিক্ষার মান উন্নয়নে উদ্যোগী হন, শিক্ষার্থীদের সাবলীল পাঠদক্ষতা ও সুন্দর হাতের লেখা গঠনে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

শিক্ষা উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন কারুশিল্প ও সৃজনশীল কার্যক্রম চালু করে তিনি বিদ্যালয়গুলোকে সুন্দর ও শিক্ষার্থী-আকর্ষণীয় পরিবেশে রূপান্তর করেন। এর ফলে বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমে আসে এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখীতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

তার এই নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ মোঃ ছানোয়ার হোসেন অধিদপ্তর থেকে ‘এক্সিলেন্ট লেটার’ অর্জন করেন। উল্লাপাড়ায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি অর্জনে অবদান রাখেন। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে উপজেলা ফুটবল দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

উপজেলার ২৭৮টি বিদ্যালয়ের প্রতিটি পরিদর্শন করে কাজের তদারকি করা একজন কর্মকর্তার জন্য বিরল দৃষ্টান্ত। সহকারী শিক্ষক থেকে শুরু করে নৈশপ্রহরী পর্যন্ত সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে তিনি প্রশাসনিক নেতৃত্বকে মানবিকতায় পরিণত করেন।

তার অনুপ্রেরণাদায়ক নেতৃত্বের একটি উদাহরণ উধুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্যার বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে এসে অবকাঠামো ও শিক্ষার মান দেখে হতাশ হন। প্রধান শিক্ষককে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি চাই, উধুনিয়া স্কুলের হারুন নয় — সবাই যেন বলে, হারুনের উধুনিয়া স্কুল।

এই অনুপ্রেরণাদায়ক উক্তি এবং স্যারের দিকনির্দেশনায় বিদ্যালয়ের সহকর্মীরা টিমওয়ার্কের মাধ্যমে মাত্র দুই মাসের মধ্যেই বিদ্যালয়টিতে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে এই বিদ্যালয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘হারুনের বিদ্যালয়’ হিসেবে পরিচিতি পায়, আর শিক্ষক হারুন স্যারের কাছ থেকে ভালোবাসার পাগলা হারুন উপাধি লাভ করেন।

স্যার প্রতিটি বিদ্যালয়ে এমনই একজন করে হারুন তৈরি করতে চেয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন।

তার আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও নিবেদন আজ উল্লাপাড়ার শিক্ষকদের হৃদয়ে গভীরভাবে স্থান করে নিয়েছে। গত ৪ নভেম্বর উপজেলা হলরুমে বদলি জনিত বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকসমাজের চোখে-মুখে ছিল অশ্রুভেজা শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার ছাপ।

 

লেখক: হারুন অর রশিদ

সহকারি শিক্ষক, উধুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণভোট নিয়ে কোনো আইন নেই: সিইসি

দিল্লিতে খলিলুর রহমান-অজিত দোভাল বৈঠক

কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার ক্ষতিকর!

শিশুশিল্পী থেকে রণবীরের নায়িকা, কে এই সারা অর্জুন!

এটা তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ম্যাচগুলোর একটি হবে

লিবিয়ায় ৩ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার পর সাগরে নিক্ষেপ

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৮৮

প্রচারণায় তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে এনসিপির আপত্তি

সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস আজ

১০

পল্লবীতে যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা: পাতা সোহেল ও সুজন গ্রেপ্তার

১১

শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা

১২