ফেনীতে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীর পানি আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
অনেকের ঘরে পানি ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। কেউ কেউ গবাদিপশুসহ পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর দোতলা ভবনের ছাদে। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, জেলায় টানা চার দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, পরশুরামের ১২টি ও ফুলগাজীর ৮টিসহ মোট ২০টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর ১০টি, কহুয়া নদীর ৬টি ও সিলোনিয়া নদীর ৪টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। এসব ভাঙনে অন্তত ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামের তনিমা সুলতানার ঘরে বুধবার রাতে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র। পরে গবাদিপশুসহ পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন প্রতিবেশী শাহজাহান মজুমদারের দোতলা ভবনের ছাদে। শুধু তনিমাই নন, আশপাশের আরও দশটি পরিবার ওই ছাদে আশ্রয় নিয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং সময়ের সঙ্গে তা কিছুটা কমেছে। তবে বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় নতুন নতুন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পানি পুরোপুরি নেমে গেলে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাঁধ মেরামতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বন্যাদুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ। জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।