টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি

ছবি : সংগৃহীত।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাসের পর থেকেই পণ্য রপ্তানিতে পতন চলছে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসেও ছিল একই প্রবণতা। মাসটিতে রপ্তানি গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৭ শতাংশেরও বেশি কমেছে। 

রপ্তানি আয় কমেছে ৫১ কোটি ডলার। গত বছরের অক্টোবরে রপ্তানি হয় ৪১৩ কোটি ডলারের পণ্য। গেল অক্টোবরে তা ৩৬২ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ নিয়ে রপ্তানি কমলো টানা তিন মাস। 

ইপিবির তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসেই পণ্য রপ্তানি কিছুটা হোঁচট খায়। রপ্তানি আয় কমে যায় ৩ শতাংশের মতো। তৃতীয় মাসের রপ্তানিও ছিল একই ধারায়। রপ্তানি কমে যায় ৫ শতাংশের মতো। 

অবশ্য একক মাস হিসেবে রপ্তানি কমলেও চলতি অর্থবছরের গত চার মাসের গড় রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। 

টানা তিন মাস রপ্তানি কমে আসার পরও চার মাসের গড় রপ্তানি বাড়ার কারণ হচ্ছে– অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো ছিল। গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় বেড়েছিল ২৫ শতাংশ। 

শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কারখানায় রাত-দিন কাজ করে পণ্য জাহাজীকরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। ব্র্যান্ড ক্রেতারাও বাড়তি শুল্ক এড়াতে আগাম আমদানিতে আগ্রহী ছিল। এ কারণে ওই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। 

গত ৩১ জুলাই ওয়াশিংটনের ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে বাংলাদেশের পণ্যের পাল্টা ২০ শতাংশ শুল্ক ৭ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কার্যকর হয়। এ সময়ের মধ্যে কোনো পণ্য জাহাজীকরণ পর্যায়ে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছতে যত দিনই লাগুক না কেন সেই পণ্যে পাল্টা শুল্ক ধার্য হয়নি।

ইপিবির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় পতনের প্রভাবেই গোটা রপ্তানি চিত্র এতটা মলিন দেখা যাচ্ছে। অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলার পোশাক, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৩৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ একক পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানিই কমেছে ২৮ কোটি ডলার। অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে অক্টোবরে পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। 

তৈরি পোশাকের এ পরিস্থিতির কারণ প্রসঙ্গে এ খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক এ বি এম শামসুদ্দীন আহমেদ গতকাল সমকালকে বলেন, পোশাকের রপ্তানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চীনের আগ্রাসী রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যে উচ্চ শুল্কের কারণে তারা অত্যন্ত কম দামে এখন ইইউর দেশগুলোতে রপ্তানি করছে। এ কারণে সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি কমছে। 

তিনি জানান, তৈরি পোশাকের দুই ধরনের পণ্য রয়েছে। নেভার আউট অব স্টক (এনওএস) এবং ফ্যাশন পণ্য। এনওএস ক্যাটেগরির পণ্য সারাবছর চলে। এসব পণ্যে তাৎক্ষণিক দর কমিয়ে বাজার দখলে নেওয়া চীনের জন্য সহজ। কারণ তাদের নিজস্ব সব ধরনের কাঁচামাল আছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন তাদের শুল্ক কমে আসার পর পরিস্থিতি হয়তো এ রকম থাকবে না। তবে সার্বিকভাবে এখন লিন সিজন। এ সময় সাধারণত পোশাকের চাহিদা কমই থাকে। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে। আর আলাদা করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি মন্দ নয়। 

এখন ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে নিটের প্রবৃদ্ধি মাত্র শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। যেখানে ওভেনের এ হার ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সমাপ্ত অক্টোবরে নিটের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মাসটিতে ওভেনে এ হার ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। 

শুধু তৈরি পোশাক নয়; রপ্তানি তালিকার গুরত্বপূর্ণ পণ্যের বেশির ভাগেরই রপ্তানি কমছে অক্টোবরে। ইপিবির তথ্য-উপাত্ত বলছে, মাসটিতে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশের মতো। রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ১৯ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য। ওষুধ রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশের মতো। 

রপ্তানি হয়েছে দুই কোটি ডলারের ওষুধ। চামড়া রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। রপ্তানি হয়েছে এক কোটি ডলারের। তবে হোমটেক্সটাইল এবং পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ১৪ ও ৭ শতাংশ। 


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণভোট নিয়ে কোনো আইন নেই: সিইসি

দিল্লিতে খলিলুর রহমান-অজিত দোভাল বৈঠক

কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার ক্ষতিকর!

শিশুশিল্পী থেকে রণবীরের নায়িকা, কে এই সারা অর্জুন!

এটা তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ম্যাচগুলোর একটি হবে

লিবিয়ায় ৩ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার পর সাগরে নিক্ষেপ

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৮৮

প্রচারণায় তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে এনসিপির আপত্তি

সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস আজ

১০

পল্লবীতে যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা: পাতা সোহেল ও সুজন গ্রেপ্তার

১১

শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা

১২