ঈদ ঘিরে কর্মমূখর সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লী

ছবিঃ তাঁত বুননে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা

 

কেউ নলিতে সুতা ভরছেন, কেউ চরকায় প্রস্তুত করছেন সুতা, কেউ আবার সুতায় মাড় দিচ্ছেন। অনেকেই ভোর থেকে করছেন তাঁত বুননের কাজ; এভাবেই সুতা থেকে তৈরি হচ্ছে শাড়ী, লুঙ্গী, গামছাসহ বিভিন্ন তাঁতপণ্য।

ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীগুলো। বিভিন্ন নকশার শাড়ি, লুঙ্গী, গামছা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তাঁতের খটখট শব্দে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখর থাকছে তাঁতপল্লীগুলো। জেলার বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তামাই ও সলঙ্গাসহ বিভিন্ন উপজেলার তাঁতপল্লী ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জেলার বেলকুচি উপজেলার কয়েকটি তাঁতপল্লী সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কারিগরদের উৎপাদিত প্রতিটি শাড়িতে আধুনিক ও শৈল্পিক কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাহারী নকশা। তাঁত পল্লীতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন নারী শ্রমিকেরাও। নলি ভরা, সুতা প্রস্তত, মাড় দেয়াসহ বিভিন্ন কাজে নারীদেরও দেখা মিলেছে সমানতালে। তবে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এবার অনেকটাই বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারখানা মালিকেরা।

তাঁত মালিকেরা জানান, সুতা- রং ও প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকায় বেড়েছে শাড়ি, লুঙ্গী ও গামছা তৈরির খরচও। জেলার তাঁতকুঞ্জ হিসেবে পরিচিত সলঙ্গার পাঁচলিয়া গ্রাম। যুগ যুগ ধরে সুপরিচিত পাঁচলিয়া তাঁতপল্লীর প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে তাঁত।  যেকয়েকটি নামকরা কাপড়ের হাট রয়েছে পাঁচলিয়া সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ঈদ মৌসুম আসলেই সলঙ্গার তাঁতপল্লীগুলোতে কাজের চাপ কয়েকগুন বেড়ে যায়। শ্রমিক, মহাজনদের যেন দম ফেলার সময় থাকে না। এসব কারখানায় তৈরি  হচ্ছে নতুন ডিজাইনের জামদানি,সুতি জামদানি,কাতান, বেনারসি, কটন জামদানি, হাফ সিল্কসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি ও লুঙ্গী। পাঁচলিয়া, আমডাঙ্গা, হোড়গাতী, রতনকান্দি, বাদুল্লাপুর, তারুটিয়া, হাসানপুর, হাটিকুমরুল, জগন্নাথপুরসহ থানার বিভিন্ন গ্রামের উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গী পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

পাঁচলিয়ার বড় মহাজন আলহাজ্ব ইদ্রিস আলী জানান,পাঁচলিয়ার উৎপাদিত শাড়ি,লুঙ্গীর সুনাম দেশ জুড়ে। তাঁতশিল্পে কিছুটা মন্দাভাব শুরু হয়েছিল। তার উপর আবার রং,সুতা ও প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি। অনেক তাঁত বন্ধ হয়েও গেছে। তারপরও বাপ-দাদার পেশা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ফারুক উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাফিজুর জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে শ্রমিকেরা দিনরাত পরিশ্রম করে বাহারী রঙয়ের শাড়ি-লুঙ্গী তৈরী করছেন, তাই তাদের জন্য ঈদ বোনাসের ব্যবস্থাও করেছি। 

আরেক মহাজন খলিল জানান, গত বছর ঈদে ব্যবসা ভালো হয়েছিল, এবারেও আশা করছি ব্যবসা ভালো হবে। 

মহাজন আরাফাত রহমান জানান, কাঁচামাল, রং,সুতার বাজার,শ্রমিকের মুল্য নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে পাঁচলিয়ার ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ক্রেতারা বাহারী শাড়ি,লুঙ্গী,গামছা কিনতে আসেন বেলকুচি, তামাই, পাঁলিয়াসহ বিভিন্ন কাপড়ের হাট থেকে। সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীর শাড়ি,লুঙ্গী, গামছা শুধু দেশেই নয়,স্থান করে নিয়েছে বিদেশেও। এতে একদিকে যেমন দেশের চাহিদা মিটছে তেমনি বাড়ছে রপ্তানি আয়ও।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

'বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই বিএনপির লক্ষ্য'

'লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল প্রমাণ করে যে বিএনপি এশিয়া মহাদেশের সর্ব বৃহৎ সংগঠন'

‘প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেই সচিবালয়ে সংকট নিরসনে সিদ্ধান্ত’

নয়াপল্টনে তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢল

চারদিনের সফরে জাপান পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

কারামুক্ত হলেন এটিএম আজহার

কুরবানি ঘিরে চুয়াডাঙ্গায় ১ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী গ্রেপ্তার

মিরপুরে দিনে-দুপুরে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাই

এটিএম আজহারের রায় নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

১০

খালাস পেলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহার

১১

জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের রায় আজ

১২