গত কয়েকদিন থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন দেশের শস্যভান্ডারখ্যাত জেলা নওগাঁ। কখনো সূর্য উঁকি দিলেও, তাতে কাজে আসছে না। ফলে কুয়াশার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আলুর ফলন। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো বীজতলা। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলার বদলগাছি আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আলু লাগাইতে এখন পর্যন্ত খরচ প্রায় ১০-১২ হাজার টাকার মতো হয়েছে। কায়শার কারণে আলুতে পচন ধরায় চরম হতাশায় আছি।
সাপাহার উপজেলার শিরন্টি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আজগর আলী জানান, তিন বিঘার মতো জমিতে আলু চাষ করেছি। কুয়াশার কারণে আলুর পাতা পচে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় ভাষায় এটাকে আমরা মড়ক রোগ বলি। আলু উঠতে এখনো অনেক দেরি, এভাবে ঘন কুয়াশা হতে থাকলে সব আলু পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই আলুতে এবছর খরচ অনেক বেশি। আলুর বীজ আর শ্রমিক বাবদ এখন পর্যন্ত ৫৮-৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।
সাপাহার সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা নাঈম হোসেন বলেন, বাজারে আলুর চাহিদা বশি হওয়ায় এবারই প্রথম প্রায় তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলুর বিজের দাম অত্যধিক বেশি, এখন অবধি তিন বিঘা জমিতে খরচ প্রায় ৬০ হাজার টাকার মতো হয়েছে। বীজবাবদ ৩০-৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে আবার গত কয়েকদিন যাবত ঘন কুয়াশায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে থাকছে। এভাবে চলতে থাকলে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগাম আলু এবং আগাম বোরো বীজতলাগুলো ঘন কুয়াশার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বীজতলা এবং আলুর জমিতে কৃষককে আগাম সতর্কীকরণ হিসেবে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক এবং বোরো বীজতলায় বিকেল বেলা পানি দিয়ে সকাল বেলা পনি বের করে দেওয়া অথবা পলিথিন পেপার দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়ার জন্য নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা এই পরামর্শগুলো গ্রহণ করলে আশা করি আলু এবং বোরো বীজতলা ঘন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এই লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ২১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আলু এবং ৯ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় ৯০ শতাংশ আলু রোপণ করা হয়েছে