বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় মানিক মিয়া এভিনিউতে আত্মপ্রকাশ করবে ছাত্রদের তুন রাজনৈতিক দল।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘিরে বাংলামটরে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
এসময় সারজিস আলম বলেন, দের যুগের অধিক সময় বাংলার মানুষ একটি স্বৈরাচারী শাসকের শাসনামলে ছিল। যা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে শেষ হয়ে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। এরপর বাংলার মানুষের সবচেয়ে বড় দাবি ছিল একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। যার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেয়। যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩ টায় জাতীয় সংসদ এলাকায় মানিক মিয়া এভিনিউতে আত্মপ্রকাশ করবে।
তিনি বলেন, এত দিন যারা জাতীয় সংসদে বসেছেন, তারা সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটিয়ে, জাতীয় সংসদকে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার ও স্বৈরাচার উৎপাদনের কারখানা বানিয়েছেন। নতুন দলের শপথ নিয়ে বলতে চাই নতুন বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও দলের ঊর্ধ্বে গিয়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করবে।
এসময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ১৫ দিনে 'আমার চোখে নতুন বাংলাদেশ' ক্যাম্পেইনে দুই লক্ষ মানুষের সাড়া পেয়েছি; এতে ঢাকা, পঞ্চগড় ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় মানুষ সাড়া দিয়েছেন। তিনটি প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়েছিলো- কী করলে বদলে যাবে বাংলাদেশ এবং নতুন রাজনৈতিক দলের নাম কী হতে পারে, প্রতীক কী হতে পারে। রাজনৈতিক দলের নামের প্রস্তাবনার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত জনতার দল, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ প্রায় ৩০টি নামের প্রস্তাবনা এসেছে। আর প্রতীকের ক্ষেত্রে উদীয়মান সূর্য,কলম, বই এবং গাছ প্রতীকের নাম সুপারিশ করা হয়েছে।
আখতার হোসেন আরো জানান, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, সরকারি-বেসরকারি সকল সংস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সুশাসন, ন্যায় বিচার ও বৈষম্য হ্রাস, রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান সংস্কার করা, রাষ্ট্র সেবা পাওয়ায় সহজলভ্যতা,দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সেবার মান উন্নয়ন এই বিষয়গুলো নিয়ে মূলত জনসাধারণের প্রত্যাশা ছিল।
দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে সততা ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলে ঠাঁই পাবে না কোনো পরিবারতন্ত্র। সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই নতুন রাজনৈতিক দল এগিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয় আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, ৯০ এর স্বৈরাচার পতনের পর বাংলার মানুষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চেয়েছিল; তবে ১/১১ এর প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থ উদ্ধার করে, যার ফলশ্রুতিতে সে স্বৈরাচার হয়ে ওঠে এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়।
হান্নান আরো জানান, সারা দেশে 'আমার চোখে নতুন বাংলাদেশ' নামে জরিপ চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি; সেখানে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ সাড়া দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নতুন দল আত্মপ্রকাশের দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি উপস্থিত থাকবেন জুলাই আন্দোলনে নিহত-আহত পরিবারের প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি কূটনৈতিকরা, যুগের পর যুগ নির্যাতিতদের প্রতিনিধি, জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগের অন্যতম সৈনিক, প্রবাসীদের প্রতিনিধি, সকল অংশীদার এবং ধর্মীয় ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।