ভুয়া বিজ্ঞাপন থেকে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার লাভ করছে মেটা

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রাজত্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড (Meta Platforms Inc.)। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের মালিক এই প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপনভিত্তিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—মেটার মোট আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে অবৈধ ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন থেকে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটার নিজস্ব আর্থিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী ২০২৪ সালে তাদের বার্ষিক আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ—অর্থাৎ প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—এসেছে ভুয়া, বিভ্রান্তিকর ও অবৈধ বিজ্ঞাপন থেকে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির একটি বড় অংশের রাজস্বই এসেছে এমন উৎস থেকে, যা সরাসরি আইন, নৈতিকতা ও ব্যবহারকারীর সুরক্ষাবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

মেটার একটি স্বয়ংক্রিয় বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা রয়েছে, তবে কোম্পানি তখনই কোনো বিজ্ঞাপনদাতার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে, যখন তারা ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত হয় যে বিজ্ঞাপনটি প্রতারণামূলক। এর আগে মেটা সেই বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে, আর বিজ্ঞাপনগুলো চালু রাখে। এর ফলে মেটার আয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

এ বিষয়ে মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, এই প্রতিবেদনটি মেটার নীতির ভুল ব্যাখ্যা করেছে। তিনি দাবি করেছেন, গত ১৮ মাসে মেটা প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত ব্যবহারকারীর অভিযোগ ৫৮ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে এবং ১৩ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া বিজ্ঞাপন সরিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ নয়—এটি ব্যবহারকারীর মানসিক নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং বিশ্বাসের পরিধিও নষ্ট করছে। প্রতিদিন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে কোটি কোটি মানুষ ছবি, তথ্য ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। সেই পরিবেশেই যখন প্রতারণা ঢুকে পড়ে, তখন তা ডিজিটাল নাগরিকত্বের ভিত্তিকে দুর্বল করে তোলে।

অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, যদি এই প্রবণতা চলতেই থাকে, তবে মেটা একসময় নিজের ব্র্যান্ডমূল্য ও ব্যবহারকারীর আস্থা—উভয়ই হারাতে পারে।

একসময় সামাজিক যোগাযোগ, স্বাধীন মত প্রকাশ ও তথ্য বিনিময়ের প্রতীক ছিল ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। কিন্তু এখন, প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের আড়ালে যখন কোটি কোটি ডলার রাজস্ব প্রবাহিত হচ্ছে, তখন প্রশ্ন উঠছে—মেটা কি এখনো “সংযোগের প্ল্যাটফর্ম”, নাকি “মুনাফার যন্ত্র”?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেটার সামনে এখন দুটি পথ—একদিকে আর্থিক মুনাফার ধারাবাহিকতা, অন্যদিকে ব্যবহারকারীর বিশ্বাস ও নৈতিক দায়বদ্ধতা। এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণভোট নিয়ে কোনো আইন নেই: সিইসি

দিল্লিতে খলিলুর রহমান-অজিত দোভাল বৈঠক

কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার ক্ষতিকর!

শিশুশিল্পী থেকে রণবীরের নায়িকা, কে এই সারা অর্জুন!

এটা তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ম্যাচগুলোর একটি হবে

লিবিয়ায় ৩ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার পর সাগরে নিক্ষেপ

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৮৮

প্রচারণায় তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে এনসিপির আপত্তি

সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস আজ

১০

পল্লবীতে যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা: পাতা সোহেল ও সুজন গ্রেপ্তার

১১

শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা

১২