ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ বেগুন, শসা ও লেবুর বাড়তি চাহিদার সুযোগে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
গত দুই দিন রাজধানীর মগবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা, রামপুরা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ও রমজান উপলক্ষে বাজারগুলোতে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দোকানের সামনে ব্যাপক ভিড়।
ক্রেতারা দরদাম করে পণ্য কিনছেন। মাছ-মাংসের দোকানগুলোর সামনেও ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার (আজ) থেকে রমজান শুরু হতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভোক্তারা প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি বাজার করছেন। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৫০ থেকে ৬০ টাকা ছিল। শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে লেবুর। এক মাস আগেও লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা ছিল। এখন দ্বিগুণের বেশি দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা হালি। উন্নত জাতের লেবুর হালি ১০০ টাকা।
বাড্ডার এক সবজি বিক্রেতা বলেন, এখন লেবুর অফ সিজন। তাই পাইকারি বাজারেই লেবুর কিছুটা সংকট রয়েছে। শীত মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বেগুনের সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
জোয়ারসাহারা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। এতে এবার নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি বলেন, কম্পানির ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও আমাদের নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কবে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, ছোলার কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বেসনের কেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, দেশি আদার কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি নতুন রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, আমদানি করা রসুনের কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।
শীতকালীন সবজির সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় কয়েকটি সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, মুলার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম মানভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
৭ দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের সংকট নিরসন হবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
খেজুরসহ সব পণ্যের দাম কমে আসবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এবারের রমজানে সব কিছুই মজুদ রয়েছে। আশা করি সরবরাহে বাজারকেন্দ্রিক সমস্যা হবে না।
পবিত্র রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্কছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার রেকর্ড হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে ৯টি ভোগ্যপণ্যের মোট আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টন।