যৌন হয়রানির অভিযোগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) এক শিক্ষককে চাকুরী থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ঐ শিক্ষকের নাম সুব্রত কুমার বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সোমবার দুপুরের পর বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে বলেন, ‘রিজেন্ট বোর্ডের সভায় সেই শিক্ষকের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। রেজুলেশন হবার পর সবাইকে জানানো হবে। এর বেশি কিছু আপাতত বলতে অপারগতা জানান তিনি।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের সাথে সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতোকোত্তরের এক ছাত্রীর দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে বিয়ের আশ্বাসে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু পরবর্তীতে সুব্রত ঐ ছাত্রীকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।
এরপর গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সুব্রত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ঐ ছাত্রী বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে এ অভিযোগ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। পরবর্তীতে সেই তদন্ত কমিটি ৯ অক্টোবর ঐ শিক্ষককে সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দেন।
এরপর এ অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল আরেকটি উচ্চতর তদন্ত করেন। তদন্তে তারা এ অভিযোগের সত্যতা পান। এরপর তারা ‘উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিরোধ নীতিমালা, ২০০৮’ অনুযায়ী সুব্রত কুমার বিশ্বাসকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন। তারপর গত শনিবার (২৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ তম রিজেন্ট বোর্ড তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্তি শিক্ষক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের মুঠোফোনে সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল ৫টা ৬ মিনিটে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরিচয় দিয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বিজন কুমার ব্রক্ষ্ম বলেন, ‘রিজেন্ট বোর্ডের সভার সিদ্ধান্ত রেজুলেশন হয়ে আমার কাছে আসবে। আসার পর আমাদের আইনজীবির সাথে পরামর্শ করে অভিযুক্ত শিক্ষককে চিঠি দিয়ে চাকুরী থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়টি জানিয়ে দেবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান খাদিজাতুল কুবরা বলেন, ‘সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার বিশ্বাসকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি শুনেছি। ওই সময় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বিভাগ থেকে তদন্ত করেছিলাম। প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছিলাম। পরে তদন্ত রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছিলাম। তখন থেকেই তাকে সব ধরনের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।’