আশরাফুলের লাশ কেটে ২৬ টুকরা, যা জানাল র‌্যাব

ছবি: সংগৃহীত ।

রাজধানীতে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ খণ্ড লাশ উদ্ধারের পর দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে দুটি নীল রঙের ড্রামে তার লাশ পাওয়া যায়। এমন নৃশংস হত্যার ঘটনায় আসামি করা হয় তার বন্ধু জরেজুল ইসলামকে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা শামীমা আক্তার কোহিনুরকে (৩৩) আলামতসহ গ্রেপ্তারের করেছে র‌্যাব-৩।

তার দেওয়া প্রাথমিক স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে শনিবার (১৫ নভেম্বর) কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

র‌্যাব জানায়, ১৪ নভেম্বর সকালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তাকে শামিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইলিং এবং লাশ গুমের পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন।

লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, গত ১১ নভেম্বর রাতে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। তিনি একই এলাকার বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ব্যবসায়িক পাওনা আদায়ের জন্য ঢাকায় আসেন। ১২ নভেম্বর সকাল থেকে তার পরিবার তার মোবাইল বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকার পানির পাম্প সংলগ্ন দুটি নীল রঙের ড্রাম থেকে ২৬ টুকরো করা এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণে মরদেহটির পরিচয় নিশ্চিত হয়—তা ছিল নিখোঁজ আশরাফুল হকের।

গ্রেপ্তার শামীমা আক্তারের মোবাইল বিশ্লেষণ ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ও জরেজ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। জরেজ তাকে জানায়—তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব। এর মধ্যে ৭ লাখ নেবে জরেজ, ৩ লাখ পাবে শামীমা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার এক মাস আগে থেকেই শামীমা নিহত আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করেন। নিয়মিত অডিও-ভিডিও কলে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন আরও বলেন, ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় আসার পর জরেজ ও আশরাফুলের সঙ্গে ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন শামীমা। সেখানে ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তিনি অচেতন হওয়ার পর জরেজ বাইরে থেকে শামীমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে।

শামীমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং মুখে কসটেপ লাগায়। এরপর ইয়াবা সেবনের উত্তেজনায় জরেজ হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাকে হত্যা করে। লাশ পাশের ঘরেই রেখে দু’জন রাত কাটায় এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, পরদিন সকালে জরেজ বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম এনে লাশ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে। দুপুরে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রামগুলো বাসা থেকে বের করে; পরে মাঝপথে সিএনজি পরিবর্তন করে হাইকোর্টের মাজার গেটের কাছে পৌঁছায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে তারা ড্রাম দুটি সড়কের পাশের গাছতলায় ফেলে দ্রুত অটোযোগে সায়েদাবাদে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে চলে যেতে বলে। এরপর থেকে দুজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।শামীমার তথ্য অনুযায়ী, শনির আখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে আশরাফুলের রক্তমাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা, হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ, একটি গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৩।

র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় আছে কি না—তা প্রধান আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পরিষ্কার হবে। গ্রেপ্তার শামীমা আক্তারকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণভোট নিয়ে কোনো আইন নেই: সিইসি

দিল্লিতে খলিলুর রহমান-অজিত দোভাল বৈঠক

কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার ক্ষতিকর!

শিশুশিল্পী থেকে রণবীরের নায়িকা, কে এই সারা অর্জুন!

এটা তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ম্যাচগুলোর একটি হবে

লিবিয়ায় ৩ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার পর সাগরে নিক্ষেপ

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৮৮

প্রচারণায় তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে এনসিপির আপত্তি

সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস আজ

১০

পল্লবীতে যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা: পাতা সোহেল ও সুজন গ্রেপ্তার

১১

শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা

১২