কিশোর সন্তানদের মারামারির ঘটনার জেরে লিটন প্রামানিক নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, মারধর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে সোহেল প্রামানিক ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে। এছাড়া বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে তারা। ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি।
মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটার দিকে পাবনার ঈশ্বরদী পৌর শহরের ৬ নাম্বার ওয়ার্ড নারিচা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী লিটন প্রামানিক।
অভিযুক্ত সোহেল প্রামানিক নারিচা এলাকার নুরুল প্রামানিকের ছেলে। ভুক্তভোগী লিটন একই এলাকার মোসলেম প্রামানিকের ছেলে। তিনি সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, লিটনের ছেলে রাহী (১৪) ঈশ্বরদী ভোকেশনাল স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। আর সোহেলের ছেলে অপু (১৬) এস এম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।
গত ২৫ জুলাই ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সামনে আড্ডা দেবার সময় অপুর সাথে তার এক বন্ধুর ঝগড়া থেকে মারামারি হয়। রাহী তাদের মারামারি ঠেকানোর চেষ্টা করেন এবং আহত অপুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পরদিন ২৬ জুলাই অপুর বাবা সোহেল বাদি হয়ে অপুর বন্ধুদের আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় দুই নাম্বার আসামি করা হয় রাহীকে। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাহীকে পাবনার বাইরে নিরাপত্তায় রাখেন।
গত রোববার (৩ আগস্ট) অপুর বাবা সোহেল তার মামলার আসামীদের মধ্যে নির্জন নামে একজনকে ধরে মারধর করেন। পরে গতকাল মঙ্গলবার নির্জন তার লোকজন নিয়ে আবার সোহেলকে ধরে মারধর করে। এই ঘটনার সাথে রাহী ও তার পরিবারকে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লিটনের ভাই জুয়েল প্রামানিকের নেতৃত্বে রানা, নাজমুল, সাদ্দাম, সাগর সহ অন্তত ২০ জন লোক রাহীদের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় বাড়িতে পুরুষ মানুষ কেউ ছিলনা।
হামলাকারীরা লিটন প্রামানিকের মেয়েকে তুলে নিযে যাবার চেষ্টা করে। বাড়ির মহিলাদের বাধায় তারা নিতে পারেনি। এ সময় বাড়ির মহিলাদের মারধর করে। পরে দুই ঘরে ঢুকে তারা মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, টেলিভিশন, ফ্রিজ সহ সহ ঘরের সকল আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। আলমারীতে থাকা স্বর্ণালঙ্কার নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। যাবার সময় মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও সবাইকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায় তারা।
লিটন প্রামানিকের স্ত্রী লতা খাতুন বলেন, তখন বাড়ির মধ্যে সাংসারিক কাজ করছিলাম। সন্ধ্যার পর জুয়েল, নাজমুল সহ অনেকগুলো লোক এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে গেট ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করে। আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। আমরা বাধা দিলে আমাদেরও মারধর করে। তারপর ঘরে ঢুকে সব ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে চলে যায়।
লিটন প্রামানিক বলেন, ছেলের বন্ধুরা এক জায়গায় আড্ডা দেবার সময় সোহেলের ছেলে অপুর সাথে তার অন্য এক বন্ধুর মারামারি হয়৷ আমার ছেলের সাথে তো কোনো ঝামেলা হয়নি। বরং আমার ছেলে তাদের ঠেকাতে গেছে। আবার আহত হলে তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে। অথচ আমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করলো। আবার আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট করলো। আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সোহেল প্রামাণিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হলে অন্য একজন ফোন ধরে বলেন তিনি অসুস্থ বাসায় নেই, হাসপাতালে আছে।
ঈশ্বরদী থানার ধারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। মামলা নথিভুক্ত করে আসামীদের গ্রেপ্তার করা হবে।