আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিস্ময়কর নিদর্শন জমজম কূপ

সংগৃহিত ছবি

বিশ্বে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যত বিস্ময়কর নিদর্শন রয়েছে জমজম কূপ তার একটি। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে পবিত্র কাবা ঘরের সন্নিকটে এ মহা বরকতময় কূপটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইবরাহিম আ: বিবি হাজেরা ও দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈল আ:কে জনমানবহীন খানায়ে কাবার কাছে নির্বাসনে রেখে যেতে আদিষ্ট হন। সামান্য পানি ও কিছু খেজুরসহ তিনি তাদেরকে সেখানে রেখে যান।

যাবার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেছিলেন, ‘হে প্রভু! জনমানবহীন মরুপ্রান্তরে তোমার পবিত্র ঘরের কাছে আমার সন্তানকে রেখে গেলাম; যেন তারা সালাত কায়েম করে। আর তাদের প্রতি তুমি মানুষের অন্তরকে ধাবিত করে দিও এবং তাদেরকে ফলফলাদি দ্বারা রিজিক দান করিও; যেন তারা তোমার শোকরগোজার হয়।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৩৭)

ইবরাহিম আ: দোয়া করে চলে যাওয়ার পর হাজেরা সন্তানকে বুকে ধারণ করে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল হয়ে সেখানে থাকতে লাগলেন। কোনো প্রতিবেশী ও খাদ্য-পানীয় ছাড়া তিনি এভাবে বেশ কিছু দিন কাটাতে থাকেন। বুকের দুধ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পর ইসমাঈল আ: যখন ক্ষুধায় কাতর হয়ে ছটফট করছিল, তখন তিনি দুগ্ধপোষ্য শিশুর জীবন বাঁচানোর জন্য একবার সাফা পাহাড়ের ওপর আরেকবার মারওয়া পাহাড়ের ওপর ছোটাছুটি করছিলেন। একসময় দেখতে পেলেন, ছেলের পায়ের আঘাতে পানির ফোয়ারা উথলে উঠছে। চারদিকে তিনি বালু ও পাথর দিয়ে পানির প্রবাহ থামালেন। সেই কুদরতি পানির ঝরনাধারাটিই হচ্ছে জমজম কূপ। এই পানি কখনো বন্ধ হবে না। বিরতিহীনভাবে পৃথিবীবাসীকে তৃপ্ত করে চলবে।

এটি হলো জমজম কূপের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এবার আপনাদের একজন বিজ্ঞানীর কথা বলব। তিনি জাপানি নাগরিক ড. মাসারু ইমোতো জাপানের বিখ্যাত ইয়াকোহামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। ‘পানির ব্যবহার’ বিষয় নিয়ে গবেষণা করে তিনি দারুণভাবে আলোচিত। পানি নিয়ে উৎসুক এ বিজ্ঞানী পানি নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

এ কৌতূহলোদ্দীপক বিজ্ঞানী পবিত্র মক্কার পবিত্র জমজম কূপের পানি নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণার বিষয়বস্তু তিনি মালয়েশিয়ার এক সেমিনারে উপস্থাপন করেন। গবেষণায় তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, জমজমের পানিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানি। সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণার সারাংশ হলোÑ ‘জমজমের পানির সমপরিমাণ কনটেন্ট বিশ্বের আর কোনো পানিতে নেই। জমজমের পানির অণুগুলো হলো বিশ্বের অন্যান্য পানির তুলনায় সবচেয়ে সুন্দর এবং ভারসাম্যপূর্ণ। জমজমের পানিতে প্রচুর নিরাময় শক্তি রয়েছে। এটি সর্বদা প্রার্থনা বেষ্টিত থাকে, ফলে সমস্ত রোগ তা নিরাময় করতে পারে।’

পবিত্র জমজম নিয়ে রাসূল সা:-এর বহু হাদিস রয়েছে। ইবনে আব্বাস রা: কর্তৃক বর্ণিত। মহানবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হলো জমজমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তির খাদ্য ও ব্যাধির আরোগ্য।’ (আল-মুজামুল আউসাত, হাদিস-৩১২) প্রিয় রাসূল সা: প্রায় দেড় হাজার বছর আগে যা বলে গেছেন, বিজ্ঞানীরা তা আজকে প্রমাণ করতে সক্ষম হচ্ছেন।

জাপানের বিখ্যাত গবেষক মাসারু ইমোতোর মতে, জমজমের এক ফোঁটা পানির যে নিজস্ব খনিজ গুণাগুণ আছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো পানিতে নেই। তিনি আরো বলেন, সাধারণ পানির এক হাজার ফোঁটার সাথে যদি জমজমের পানির এক ফোঁটা মেশানো হয়, তাহলে সেই মিশ্রণও জমজমের পানির মতো বিশুদ্ধ হয়। জমজমের পানির মতো বিশুদ্ধ পানি পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না।

ইবরাহিম খলিলুল্লাহ আ:-এর ছেলে হজরত ইসমাঈল ও স্ত্রী হাজেরা আ:-এর এই স্মৃতিকে মহান আল্লাহ এতটাই বরকতময় করে রেখেছেন যে, পৃথিবীতে এই পানির নজির আর তিনি রাখেননি। এই পানিকে তিনি বানিয়েছেন সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত এবং হাজারো জীবাণুর প্রতিষেধক।

জাপানি বিজ্ঞানী মাসারু ইমোতো ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণা করেছেন জমজমের পানির ওপর। কেন জমজমের পানি পৃথিবীর বিশুদ্ধতম পানি তার কিছু বৈজ্ঞানিক ধারণা বের করেছেন গবেষণার মাধ্যমে

১. আকরিক পদার্থ : এক ফোঁটা জমজমের পানিতে যে পরিমাণ আকরিক পদার্থ থাকে তা পৃথিবীর অন্য কোনো পানিতে থাকে না।

২. অপরিবর্তনীয় গুণমান : জমজমের পানির গুণগত মান কখনো পরিবর্তিত হয় না। এটি আজীবন একই গুণমানে পৃথিবীকে তৃপ্ত করে যাবে।

৩. অণুজীবহীন পরিবেশ : সাধারণ কূপের পানিতে জলজ উদ্ভিদ জন্মালেও জমজম কূপের পানিতে কোনো জলজ উদ্ভিদ বা অন্যান্য উদ্ভিদজাত অণুজীব জন্মায় না।

৪. মিনারেলের মাত্রা অধিক : জমজমের পানিতে যেসব আকরিক পদার্থ পাওয়া গেছে তার মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফ্লোরাইড, সোডিয়াম, ক্লোরাইড, সালফেট, নাইট্রেট, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম উল্লেখযোগ্য। ফ্লোরাইড ছাড়া বাকি মিনারেলগুলোর মাত্রা অন্যসব স্বাভাবিক খাবার পানিতে পাওয়া মাত্রা থেকে বেশি ছিল।

৫. ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা কম : জমজমের পানিতে এন্টিমনি, বেরিলিয়াম, ব্রোমাইন, কোবাল্ট, বিস্মুথ, আয়োডিন আর মলিবডেনামের মতো পদার্থগুলোর মাত্রা ছিল ০.০১ পিপিএম থেকেও কম। ক্রোমিয়াম, ম্যাংগানিজ আর টাইটানিয়ামের মাত্রা ছিল একেবারেই নগণ্য।

৬. পানির পিএইচও ঝুঁকিমুক্ত মাত্রা : জাপানি বিজ্ঞানীর পরীক্ষা অনুযায়ী জমজমের পানির পিএইচ হচ্ছে ৭ দশমিক ৮। যেটি সামান্য ক্ষারজাতীয়। বিজ্ঞানী তার পরীক্ষায় আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, সিসা এবং সেলেনিয়ামের মতো ক্ষতিকর পদার্থগুলো ঝুঁকিমুক্ত মাত্রায় পেয়েছেন। যে মাত্রাগুলোতে মানুষের কোনো ক্ষতি হয় না।

৭. অনন্য গঠন : মাসারু তার পরীক্ষায় জমজমের পানির এমন এক ব্যতিক্রমধর্মী মৌলিক আকার পেয়েছেন যেটি খুবই চমকপ্রদ। পানির দুটি স্ফটিক সৃষ্টি হয়- একটি আরেকটির উপরে কিন্তু সেগুলো একটি অনুপম আকার ধারণ করে।

এখন শোনো আরেক গবেষকের কথা। উৎ কহঁঃ চভবরভভবৎ, জার্মানির একজন খ্রিষ্টান ডাক্তার। তিনি আবিষ্কার করেছেন, মানুষের কোষে দৈনন্দিন পান করা পানির চেয়ে জমজমের পানির ইতিবাচক প্রভাব অনেক বেশি। বিখ্যাত এ ডাক্তার মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্য ও শক্তিতে খ্রিষ্টীয় ইবাদতের চেয়ে ইসলামী ইবাদতগুলোর ইতিবাচক প্রভাব আরো বেশি।’

জমজম থেকে ভারী মোটরের সাহায্যে ঘণ্টায় আট হাজার লিটার পানি এখান থেকে উত্তোলন করা হয়। দিনে ৬৯১ দশমিক ২ মিলিয়ন লিটার পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপরও তা থেকে একটুও কমছে না, এটি আল্লাহর মহা কুদরত। জমজমের পানির উৎস তিনটি বলে লে ধারণা করা হয়- ১. কাবা ঘরের নিচ থেকে হাজরে আসওয়াদ হয়ে একটি পয়েন্ট; ২. সাফা পাহাড়ের নিচ থেকে একটি পয়েন্ট ও ৩. মারওয়া পাহাড়ের নিচ থেকে একটি পয়েন্ট। জমজম কূপের মুখ থেকে নিচে ৪০ হাত পর্যন্ত প্লাস্টার করা। তার নিচে আরো ২৯ হাত কাটাপাথর বিছানো। এসব পাথরের ফাঁক দিয়েই তিনটি প্রবাহ থেকে এ পানি নির্গত হচ্ছে।

ইবনে মাজাহ শরিফে একটি হাদিস উল্লেখ হয়েছে- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। জমজমের পানি দাঁড়িয়ে তিন শ্বাসে পান করা সুন্নত। পান করার সময় এই দোয়া পড়া যেতে পারে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফেয়া, ওয়া রিজকান ওয়াসিয়া, ওয়া শিফায়ান মিন কুল্লি দায়িন’ অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি। জমজমের পানি মহান আল্লাহর মহান নিয়ামত। এ পবিত্র পানি পান করে মনে প্রশান্তি লাভ করে কলিজা জুড়ায় বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ আর মনের অজান্তে জমজমের মালিকের প্রশংসায় বলে উঠে ‘আলহামদুলিল্লাহ’।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের টিকিটের মূল্য প্রকাশ, যেভাবে কিনবেন

হত্যাচেষ্টার মামলায় অপু বিশ্বাসের জামিন

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ

সেনা কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন

নীরব ঘাতক ফুসফুুুুসের ক্যানসার, যেসব লক্ষণ বিপদের সংকেত দিচ্ছে

মিটফোর্ডে শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’ ঘোষণা

দুই মাসে ৬ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে কুয়েত

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত

দুপুরের মধ্যে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১০

আবু সাঈদ হত্যা ও ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা: আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির

১১

‘অন্যায়কারী যেই হোক, আমরা প্রশ্রয় দেব না’

১২