দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে এক নবজাতককে রেখে গেছেন তার নানা-নানি। ভর্তি করার পর ওয়ার্ডে রেখে নবজাতকের মাকে আনতে যাচ্ছি বলে পালিয়ে যান তারা। শিশুটির বিছানার পাশে তার মায়ের লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
অবিভাবকহীন এই শিশুকে দত্তক নিতে ডাক্তার ইঞ্জনিয়ার, নার্স, ব্যবসায়ী ও বিসিএস ক্যাডারসহ সন্তানহীন ২০০ জন হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।
নবজাতকটি বর্তমানে হাসপাতালের পেডিয়ার্টিক ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছে। সে শারীরিকভাবে সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ওই নবজাতককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্ট্রারে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ইনছুয়ারা, শাহিনুর, আলাদিপুর, ফুলবাড়ী। আর বাজারের ব্যাগে নবজাতকের মায়ের রেখে যাওয়া চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমি মুসলিম। আমি একজন হতোভাগি। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম। দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন। বাচ্চার জন্মতারিখ ৪ নভেম্বর ২০২৫ (মঙ্গলবার)। এগুলো সব বাচ্চার ওষুধ...।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিশু ওয়ার্ডে এক নবজাতককে ভর্তি করেন নানা-নানি।
চিকিৎসক শিশুটিকে দেখতে গিয়ে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চান। ওই সময় শিশুর সঙ্গে থাকা এক দম্পতি জানায় তারা নানা-নানি, মা নিচে রয়েছেন। চিকিৎসক তাদেরকে শিশুটির মাকে নিয়ে আসতে বললে তারা শিশুটিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে আর ফিরে আসেননি।
বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগীর স্বজনরা শিশুটিকে দেখতে ভিড় জমায়। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে শিশুটিকে ওয়ার্ডের ৫১৭ নম্বর ডাক্তার রুমে নেওয়া হয়।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক গোলাম আহাদ বলেন, পঞ্চাশোর্ধ্ব এক দম্পতি গতকাল সন্ধ্যায় শিশুটিকে নিয়ে এসে ভর্তি করতে বলেন। নিজেদের পরিচয় দেন শিশুটির নানা-নানী হিসেবে। তিনি শিশুটির মায়ের খোঁজ করলে তাঁরা বলেন, মা নিচে আছেন। তিনি মাকে নিয়ে আসতে বললে বাচ্চাসহ ওই দম্পতি বেড়িয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর শিশু ওয়ার্ডের বাইরে একটি বেডে বাচ্চাটিকে একা থাকতে দেখে অন্যরা বিষয়টি জানান। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটির মা ও স্বজনদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিশুটির বিছানায় একটি বাজারের ব্যাগে কিছু ওষুধ, ডায়াপার ও জামাকাপড় পাওয়া গেছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসক গোলাম আহাদ আরও বলেন, স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের যে সময়কাল, তার আগেই বাচ্চাটির জন্ম হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে সুস্থ আছে। ফটোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্মারে রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, একটি ব্যাগে ভরে বাচ্চাটিকে হাসপাতাল পর্যন্ত এনেছেন তার স্বজনেরা। এরই মধ্যে অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময় শিশুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।