ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়া

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করছেন কৃষক।

আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলায় কৃষকরা খেতের ফসল পশু-পাখি, ইঁদুর ও মানুষের কু-নজর হতে রক্ষার কৌশল হিসেবে অদ্ভুত ও অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই অভিনব আবিষ্কারের নাম কাকতাড়ুয়া। আদিকাল থেকেই ফসলের ক্ষেতে এই অভিনব কাকতাড়ুয়ার দেখা পাওয়া যায়। আধুনিক যুগে আগের মতো অধিক সংখ্যক কাকতাড়ুয়া দেখা না গেলেও এখনো বিভিন্ন ফসলের মাঠে দেখা মেলে এই আদিম যুগের আবিষ্কার কাকতাড়ুয়ার। মুলত কৃষকরা তাদের বিশ্বাস থেকেই কাকতাড়ুয়া (মানুষের প্রতিক) বানিয়ে ফসলের ক্ষেতে দাড় করিয়ে রাখে। 

জানা গেছে, ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিসর সভ্যতায় প্রথম কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার শুরু হয়। নীল নদের অববাহিকার উর্বর পলিমাটিতে মিসরীয়রা চাষাবাদ করত। মিশরীয় কৃষকরা তাদের ফসল পশু-পাখী,পোকা-মাকড় থেকে রক্ষার জন্য আবিষ্কার করেন কাকতাড়ুয়া। লম্বা দন্ডায়মান একটি খুঁটি এবং দুই বা তিন ফুট ওপরে আড়াআড়ি আরেকটি খুঁটি বেঁধে তাতে ছন বা খড় প্যাঁচিয়ে মোটাসোটা করা হয়। তারপর আড়াআড়ি বাঁধানো অংশের সামান্য ওপরে ছন বা খড়কুটো দিয়ে ডিম্বাকৃতি বা মাথার মতো বস্তু বানানো হয়। এরপর ছেঁড়া জামা বা পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়া হয় এটিকে। ডিম্বাকৃতির অংশটিকে ঢেকে দেওয়া হয় মাটির হাঁড়ি দিয়ে। সেই হাঁড়িতে চোখ-নাক-মুখ এঁকে দেওয়া হয় চুন বা চক দিয়ে এভাবে তৈরি করা হয় কাকতাড়ুয়া। 

কৃষি বিজ্ঞানের মতে, ফসলি জমিতে পাখির উপদ্রব নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে ফসলের ক্ষেতে শস্য খেতে এবং নষ্ট করতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে ভিড় জমায়। কাকতাড়ুয়া সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়। এতে পাখির মৃত্যু ঘটে না, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও অক্ষুণ্ন থাকে। এটি কৃষকদের জন্য সাশ্রয়ী ও কার্যকর একটি সমাধান।

সরেজমিনে উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের ফসলের জমিতে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রেখেছেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদের ধরণ বদলে গেলেও উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষেতের ফসল রক্ষায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করছেন। 

 কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি মনের বিশ্বাস থেকে তাদের জমিতে কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘ বছর ধরে। তাদের ধারনা, কাকতাড়ুয়ার কারণে জমিতে নানান রকম পোকা, ইদুর, পশু-পাখির এবং মানুষের কু-নজর থেকে ফসল রক্ষা পাবে। এতে ক্ষেতের ফসল ভালো হবে। মুলত এসবকারণেই কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার। 

উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের কৃষক ছমের আলী বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমাদের বাবা-চাচারা ফসলের জমিতে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে দাড় করিয়ে রাখতেন। আমরাও তাদের দেখাদেখি এটা করছি। আমরা শুনেছি কাকতাড়ুয়ার কারণে ফসলের জমিরে দিকে মানুষের কু-নজর পড়ে না, ফসলে পোকা, পশু-পাখীর আক্রমণ কম হয়। এতে জমিতে ফসল ভালো হয়। এসব বিশ্বাস থেকেই আমরা কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছি। 

উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক বলেন, আমরা জমিতে বিজ্ঞান সম্মত প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছি। কাকতাড়ুয়ার আকৃতি মানুষের মতো হওয়ায় কোন পশু-পাখী ফসলের জমিতে আক্রমণ করার আগে জমির মধ্যে দাড়িয়ে থাকা কাকতাড়ুয়াকে মানুষ ভেবে ভয় পেয়ে চলে যায়। এতে পশু-পাখীর আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা পায়। এসব কারণেই আমরা ফসলের জমিতে কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছি।  

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার আদি কাল থেকেই।  উল্লাপাড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো কাকতাড়ুয়া ব্যবহারের প্রচলন আছে। সবজি জাতীয় ফসলের মাঠে কাকতাড়ুয়া বেশী দেখা যায়। কাকতাড়ুয়া ব্যবহারের ফলে ফসল বিভিন্ন পশু-পাখী থেকে রক্ষা পায়।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

'বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই বিএনপির লক্ষ্য'

'লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল প্রমাণ করে যে বিএনপি এশিয়া মহাদেশের সর্ব বৃহৎ সংগঠন'

‘প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেই সচিবালয়ে সংকট নিরসনে সিদ্ধান্ত’

নয়াপল্টনে তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢল

চারদিনের সফরে জাপান পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

কারামুক্ত হলেন এটিএম আজহার

কুরবানি ঘিরে চুয়াডাঙ্গায় ১ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী গ্রেপ্তার

মিরপুরে দিনে-দুপুরে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাই

এটিএম আজহারের রায় নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

১০

খালাস পেলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহার

১১

জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের রায় আজ

১২