পাঁচ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে রাজধানীর কড়াইল বস্তির আগুন। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের অক্লান্ত চেষ্টায় রাত সাড়ে দশটার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে ভয়াবহ এই আগুন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হলেও হতাহতের কোন খবর মেলেনি, তবে পুড়ে গেছে ১৫শ ঘর। আগুনের কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির দাবানল; মুহূর্তেই যা নিঃশেষ করে দিয়েছে কড়াইল বস্তিবাসীর স্বপ্ন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লাগা আগুন টানা ৫ ঘন্টার বেশি সময় ধরে জ্বলতে থাকে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পরে কড়াইল বস্তির বউবাজার অংশে। খবর পেয়ে শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট এবং পরে আরও ৯টি ইউনিট এসে যোগ দেয় আগুন নেভানোর কাজে।
তবে একে তো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা তার ওপর উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন গণমাধ্যমকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট কাজ করে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে, বস্তির ঘিঞ্জি এলাকা এবং ঘটনাস্থলে তীব্র পানি সংকটের কারণে আগুন নেভাতে কর্মীদের ব্যাপক বেগ পেতে হয়।
আগুনে সব হারিয়েছি, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই
লাভলী বেগম, সাত বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে বসবাস করছেন। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এই নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুনে আমাদের সব হারিয়েছি। কিস্তিতে কেনা জিনিস, কিছু জমানো টাকা, কাপড় সব কিছু পুড়ে গেছে। এখন আমাদের বাচ্চারা কোথায় ঘুমাবে, আমরা জানি না। পানিতে ভেজার কারণে তারা শীতে কাঁপতে শুরু করেছে। আমরা সাহায্য চাই, নিরাপদ আশ্রয় চাই।
তার পাশে থাকা ভ্যান চালক স্বামী মোহসিন আলী বলেন, আগুন লাগার সময় আমি একটা ভাড়া নিয়ে গিয়েছিলাম। যখন খবর পেলাম সব ফেলে রেখে দৌড়ে এলাম। কিন্তু সেই মুহূর্তে আর কিছুই করতে পারিনি। আমাদের ঘর, আমাদের সব সম্পদ শেষ হয়ে গেছে।
শামসুল ইসলাম নামে আরেক দিনমজুর জানান, মাত্র দুই মাস আগেই তিনি এই বস্তিতে উঠেছেন। তিনি বলেন, আগুনে আমার নতুন জিনিসপত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন এত তীব্র ছিল যে আমরা কোনো জিনিসই রক্ষা করতে পারিনি। চারিদিক ধোঁয়া আর আগুনে ঘিরে আমাদের বের হতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
সারারাত কীভাবে কাটালেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বড় মানুষ, আমাদের নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাদের নিয়ে। তারা তার ফুফুর সঙ্গে খামারবাড়ি মাঠের পূর্ব পাশে এক জায়গায় বিছানা করে শুয়ে ছিল। এভাবেই রাত কাটা তাদের।
খাবার-পানির অভাবে চরম কষ্টে ক্ষতিগ্রস্তরা
এদিকে আগুনে বাড়ি-ঘর সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে খাবার এবং পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পরিবারের পুরুষ অভিভাবক আগুন এবং ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় নারী ও শিশুদের খাবারের সংকটে পড়তে দেখা গেছে। তবে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি এবং জামায়াতসহ কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীরা অস্থায়ীভাবে খাবার ও পানি পৌঁছে দিচ্ছে। তবে সংখ্যা কম এবং বিতরণ সব পরিবারে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেকেকই পরিবারের নারী-শিশুদের খালি পেটেই রাত কাটাতে হয়েছে।
লাভলী বেগম নামে এক নারী বলেন, আমরা আশ্রয়হীন, শীতের মধ্যে শিশুদের কী হবে তা ভেবে আমাদের নিঃশ্বাসও ওঠে না। খাবারের ব্যবস্থা নেই, পানি নেই। বাচ্চারা না খেয়েই কান্না করে করে ঘুমিয়েছে।