বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫,
১৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
১৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁও কার্যালয়ে ২১ জন শহিদ পরিবার ও ৭ জন আহতের মধ্যে আর্থিক বরাদ্দের চেক হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদের ইতিহাসের স্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সবসময় ভাবি যাদের কারণে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস করছি, তাদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না। আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না সে জাতি, জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না।
শহিদ পরিবার ও আহতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।
সব হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল বিষয়ই হলো সুবিচার হতে হবে। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। আমরা অবিচারে নামবো না।
অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয়, তাদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে। যে দেশ আমরা একসঙ্গে গড়ার স্বপ্ন দেখছি, সেই দেশ একসঙ্গে গড়ি। আমরা একযোগে যত তাড়াতাড়ি পারি বাংলাদেশকে একটি সুন্দর দেশ বানাবো। এ সময় জুলাই শহিদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের দেশে কোনো সহিংসতা ও হানাহানি যেন না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এদিন অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই শহিদ ও আহতদের জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদরা ‘জুলাই শহিদ’ নামে অভিহিত হবেন এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। সেই সঙ্গে তারা পরিচয়পত্র পাবেন।
এর আওতায় প্রতিটি শহিদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি শহিদ পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হবে। এছাড়া শহিদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
এদিকে জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধাদি পাবেন। এরমধ্যে গুরুতর আহতদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী এককালীন ৫ লাখ টাকা দেয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেয়া হবে। এছাড়া ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন। এর বাইরেও তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।
অন্যদিকে ‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা দেয়া হবে। আর ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেয়া হবে। এর পাশাপাশি মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা এবং কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি অথবা আধাসরকারি কর্মসংস্থান প্রাপ্য হবেন। এছাড়াও জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দেয়া হবে। তারা পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধাদিও পাবেন।
এ পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহিদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এছাড়া আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এ তালিকাও গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি আপনাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল আরও আগেই আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো করতে পারব। আমাদের আন্তরিকতার কম ছিল না। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রত্যেকে আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা দেয়ার জন্য কাজ করেছেন। সংকটকালীন সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে সে কারণে আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা করতে পারিনি। এ কারণে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
