ঠাকুরগাঁও জেলায় বড় কোনো শিল্প-কারখানা না থাকায় এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই কৃষিতেই স্বপ্ন বুনেন এ জেলার মানুষ।
গত কয় দিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে সেই স্বপ্নে নেমেছে ঘন কালো মেঘ-জমির মাটিতে নুয়ে পড়েছে আমন ধান, সঙ্গে নুয়ে পড়েছে কৃষকের আশাও।
গত বছর আগাম সবজিসহ আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এবার বাড়তি লাভের আশায় আমন চাষে ঝুঁকে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়া ও টানা বৃষ্টিতে আবারো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
ইতোমধ্যে জমিতে পড়ে থাকা ধানে গজাতে শুরু করেছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলাসহ জেলার রানীশংকৈল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও পীরগঞ্জ উপজেলার চিত্র প্রায় একই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত তিন থেকে চার দিনে ঠাকুরগাঁও জেলায় ২২ দশমিক ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। পাশাপাশি ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে আগাম সবজি আবাদ হয়েছে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে।
রানীশংকৈল উপজেলার চোপড়া গ্রামের কৃষক হোসেন আলি জানান, আমি প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে আমন রোপণ করেছিলাম। বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে আমার প্রায় সব ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে।
কয়েকদিন আগে ছিলো কারেন্ট পোকার আক্রমণ এখন বৃষ্টিতে এ অবস্থা। এবার মনে হচ্ছে লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হবে বেশি।
সদর উপজেলার ফকদনপুর এলাকার আমন ধান চাষি নুরল ইসলাম বলেন, আগাম জাতের লম্বা ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বিশেষ করে যারা ধান কেটেছেন তারা পানির জন্য বেশ সমস্যায় রয়েছেন। জমে থাকা পানি দ্রুত না সরে গেলে বা রোদের দেখা না পাওয়া গেলে ধানের জন্য ব্যাপক ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বড় ভয়ের বিষয় হলো, জমিতে পড়ে থাকা ধানে ইতোমধ্যে গাছ গজাতে শুরু করেছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আলমগীর কবীর বলেন, গত তিন দিনের বৃষ্টিতে নিম্ন থেকে অতিনিম্ন জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি, যেসব ধান নুয়ে পড়েছে সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে। এতে কিছুটা হলেও ক্ষতি কম হবে। সে সঙ্গে ধানের জমিতে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। আশা করি এতে করে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না কৃষকদের।