কার্পাসডাঙ্গায় কবি নজরুল

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনেক স্মৃতি রয়েছে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায়। তিনি একাধিকবার এসেছেন এখানে। এখানে বসে তিনি লিখেছেন ছড়া, কবিতা, গান। কার্পাসডাঙ্গায় এসে তিনি যে ঘরে থাকতেন, কবির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ঘরটি সেভাবেই রাখা হয়েছে। কবির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কবির জন্মদিন-মৃত্যুদিন কার্পাসডাঙ্গায় জাতীয়ভাবে পালন করা হয়।

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের  প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে ঐতিহাসিক স্থান কার্পাসডাঙ্গায় পর পর দু’মাস ধরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বপরিবারে বসবাস করে গেছেন। 

 

 

 

কালকাতার আর্মহাস্ট স্ট্রিটে বসবাসকালে কবি নজরুলের সঙ্গে একই  এলাকার বাসিন্দা বৈদ্যনাথ বাবু , হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ও মহিম বাবুর সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে তাদের আমন্ত্রনে  ইংরেজি ১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে পর পর দু’বার নদীপথে কবি নজরুল স্বপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় এসেছিলেন। সঙ্গে আসা স্ত্রী প্রমিলা,দু’পূত্র সব্যসাচী ও বুলবুল এবং শাশুড়ী গিরিবালাকে সাথে নিয়ে কবি উঠেছিলেন বর্তমান কার্পাসডাঙ্গার মিশনপাড়ার হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাগান বাড়ীর একটি আটচালা খড়ের ঘরে। এ ঘরটি এখনও বিদ্যমান। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে এ ঘরটিতে হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের পূত্র প্রদ্যুত কুমার বিশ্বাসের ছেলেরা স্বপরিবারে বসবাস করছেন। কবি নজরুলের কার্পাসডাঙ্গায় আসার মুল কারন ছিল স্বদেশী আন্দোলন। সে সময় নজরুল ইসলাম কার্পাসডাঙ্গায় স্বদেশী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত গোপনে বৈঠক করতেন। দিনের বেলা কবি ঝাউগাছের নিচে বসে গান শেখাতেন স্বদেশী আন্দোলনের নেতা মহিম সরকারের দু’কন্যা আভারানী সরকার ও শিউলীরানী সরকারকে। তারা ছিল কবির গানের ছাত্রী। অবসরে বর্তমান খৃষ্টান মিশনারী চার্চের পিছনে ভৈরব নদের পাড়ে সান বাঁধানো ঘাটের সিঁড়িতে বসে নিমগাছের ছায়াতলে তিনি এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমানদের সে সময়ের চরম দারিদ্র্যের বা¯তব চিত্র তুলে ধরে ‘মৃত্যক্ষুধা’ রচনা করেন। এসময় অনতিদুরে ঝাঁউ গাছের খোঁড়লে একটি গোখরো সাপ টিয়া পাখির বাচ্চা খেতে গাছে উঠলে পাড়ার ছেলেরা সাপটিকে পিটিয়ে মারে। এতে কবি ছেলেদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এখানে বসে রচনা করেন ‘পদ্মগোখরো’ কবিতা। তাছাড়ও উল্লেখযোগ্য, কবির ‘লিচু চোর’ কবিতার অংশবিশেষও এই কার্পাসডাঙ্গার বাবুদের তাল ও লিচু বাগানকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল বলে জানা গেছে। নদীতীরের সে সানবাঁধানো সিড়ির অবশিষ্ট ধ্বংশপ্রায় ৪টি ধাপ নদীপাড়ের জঙ্গলের মধ্যে এখনও বর্তমান।এই সিঁড়ির পাশে এবং যে ঝাউ গাছের নিচে বসে কবি গান শেখাতেন সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে একাধিক স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হয়েছে। কবি নজরুলের স্মৃতি ধরে রাখতে ১৯৯০ সালে কার্পাসডাঙ্গায় নজরুল স্মৃতি সংসদ গঠন করা হয়।

কার্পাসডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। পাশেই ছিল চার্চ অব বাংলাদেশের অফিস। যা এখনো আছে। কবি এখানে ঘুরেছেন-বসেছেন। ভৈরবের তীরে বসে তিনি লিখেছেন অনেক গান। 

কবি কার্পাসডাঙ্গায় অবস্থানকালে পদ্মগোখরো লিখেছেন। ভৈরবের তীরে বসে লিখেছেন গান কোন কুলে আজ ভিড়লো তরি...। কবি যে আটচালা ঘরে থাকতেন সেই ঘরে শুধু কবির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ঘরটি সেভাবেই রাখা হয়েছে। ভৈরব নদীর তীরে চার্চ অব বাংলাদেশের স্কুল ও হাসপাতাল এলাকায় কবি যেখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন সেসব স্থানে স্মৃতি ফলক  তৈরি করা হয়েছে কবির সম্মানে। 

প্রতিবছর জাতীয়ভাবে কবির জন্মদিন ও মৃত্যুদিন নানা আনুষ্ঠানিকতায় চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় পালন করা হয়। এ বছরও জাতীয় কবি কাজী নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত কার্পাসডাঙ্গায় কবির ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংস্তৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। 

জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কার্পাসডাঙ্গায় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসি।

 

 

 


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের টিকিটের মূল্য প্রকাশ, যেভাবে কিনবেন

হত্যাচেষ্টার মামলায় অপু বিশ্বাসের জামিন

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ

সেনা কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন

নীরব ঘাতক ফুসফুুুুসের ক্যানসার, যেসব লক্ষণ বিপদের সংকেত দিচ্ছে

মিটফোর্ডে শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’ ঘোষণা

দুই মাসে ৬ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে কুয়েত

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত

দুপুরের মধ্যে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১০

আবু সাঈদ হত্যা ও ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা: আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির

১১

‘অন্যায়কারী যেই হোক, আমরা প্রশ্রয় দেব না’

১২