জুলাই জাতীয় সনদ হস্তান্তর আজ

ছবি: সংগৃহীত ।

অবশেষে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নের পদ্ধতিসংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল সোমবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠকে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়।

সভাসূত্রে জানা গেছে, সুপারিশে সনদের আইনি ভিত্তির জন্য সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই আদেশের ওপর গণভোট হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ পাস করলে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে আগামী সংসদ। এ জন্য সংসদ সদস্যদের নিয়ে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হবে। বাস্তবায়ন কাজ শেষে ওই পরিষদ বিলুপ্ত হবে। তবে সংসদ চলমান থাকবে। এ ছাড়া সনদে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ও গণভোটের সময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আজ দুপুরে সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার পাশাপাশি আইনি বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয়ে একাধিক বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকার ওই সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর থেকে এর বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে কাজ করে ঐকমত্য কমিশন। গতকালও জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে বৈঠক করেন কমিশনের সদস্যরা। সনদের নানা দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি ভুল-ত্রুটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

এর পর বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সনদ ও সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমাপনী বৈঠক হয় কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ দুপুর ১২টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই সব সুপারিশ তুলে ধরা হবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের কাছে সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ হস্তান্তরের পাশাপাশি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ও গণভোটের সময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানানো হবে। সরকার গণভোটের আগে সাংবিধানিক আদেশ জারি করবে। যে আদেশের নাম হবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ-২০২৫’। ওই আদেশের ওপর গণভোট হবে। গণভোটে সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটের প্রস্তাব থাকবে। সেক্ষেত্রে জনগণ অনুমোদন দিলে আগামী সংসদ (সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ) দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে। সংবিধান সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে জুলাই সনদে উল্লিখিত সংস্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শেষে সংস্কার পরিষদ বিলুপ্ত হবে এবং সংসদ চলমান থাকবে।

জানা গেছে, কমিশনের সমাপনী বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সমস্ত ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে- সমস্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে, সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, এগুলো হবে ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায় তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্ট থেকে যাবে। এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।

সমাপনী বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।

এ ব্যাপারে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে কমিশন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার, নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার। আর কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাক্সক্ষা দৃশ্যমান ছিল। দলগুলো সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাক্সিক্ষত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এর পরও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করব।

কমিশন সদস্য নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে। গণ-অভ্যুত্থানে এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এত মানুষ আহত হলো, এটা স্মরণে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার যাতে নিশ্চিত হয়। এই সুযোগ যেন না হারাই।

কমিশন সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল একই রকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।

কমিশন সদস্য ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বসে যে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে, ভবিষ্যতেও যেন এ ধরনের সৌহার্দ থাকে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণভোট নিয়ে কোনো আইন নেই: সিইসি

দিল্লিতে খলিলুর রহমান-অজিত দোভাল বৈঠক

কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার ক্ষতিকর!

শিশুশিল্পী থেকে রণবীরের নায়িকা, কে এই সারা অর্জুন!

এটা তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ম্যাচগুলোর একটি হবে

লিবিয়ায় ৩ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার পর সাগরে নিক্ষেপ

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৮৮

প্রচারণায় তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে এনসিপির আপত্তি

সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস আজ

১০

পল্লবীতে যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা: পাতা সোহেল ও সুজন গ্রেপ্তার

১১

শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা

১২