রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের বিপরীতে ৩ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকার চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এই রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
নিজ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞেসাবাদ করার জন্য ১১টা কারণ উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকালে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি এই নির্বাচন সুষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পন্ন না করে কেবলমাত্র একটি দলকে নিয়ে ডামি নির্বাচনের আয়োজন করলেন কেন? সার্চ কমিটির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছিলেন এবং কেন যোগাযোগ করেছিলেন? তিনি ডামি নির্বাচন করার নিমিত্তে সংসদীয় আসন ভেঙে কেন আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে সংসদীয় আসন সৃষ্টি করলেন? কমপক্ষে ৬০টি ডামি আসন নিশ্চিত করার জন্য কাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন? নির্বাচন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্বাচনী ভাতা বৃদ্ধি করেছিলেন কেন?
আরও বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত আসামি ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫ ভাগ ভোট পড়েছে বলে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বক্তব্য দেন। পুনরায় এক ঘণ্টা পরেই ৪০ শতাংশ ভোট হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। একটি অলৌকিক বিষয়। আসামি কার ইন্ধনে ও পরামর্শে ৪০ শতাংশ ভোট কাষ্ট হয়েছে মর্মে উল্লেখ করিয়াছেন তা উদঘাটন।
ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকারি আদেশ, সাংবিধানিক ক্ষমতা হ্রাস, দেশের জনগণের ভোটাধিকার লঙ্ঘণ করেছে। তরুণ সমাজের ভোটে বিমুখ, ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ব্যবস্থা না করে গ্রেপ্তারকৃত আসামি একটি দলের মাধ্যমে ডামি নির্বাচনের সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ করে।
আসামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করার লক্ষ্যে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসনমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণ করে কত টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছে তা উদঘাটন। যাতে করে কোটি কোটি নতুন প্রজন্মের ভোটারগণ ভোট দিতে পারেনি। তাতে দেশে স্বৈরাচারীর বীজ বপন করা হয়েছিল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যা ব্যয় হয়েছে তা কি শুধুমাত্র একটি দলকে বিজয়ী করার জন্য হয়েছে কি না? আসামি একটি মাত্র দলকে নিয়ে ডামি নির্বাচন সম্পন্ন করে দেশের জনগণের ভোট নষ্ট করে, ভোটের প্রতি জনগণের যে বিশ্বাস তা ভঙ্গ করে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করিয়াছে এবং সাংবিধানিক পদে থেকে শপথ ভঙ্গ করে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করেছেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ইয়ামিন হাসান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।