বিচ্ছিন্ন জনপদে যোগাযোগ বলতে বোঝাতো পাহাড়ি ঢাল বেয়ে পায়ে হাঁটা উঁচুনিচু বন্ধুর পথ। সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসেবা বা আধুনিক জীবনের ছোঁয়া থেকে বহু দূরে ছিলো এখানকার বাসিন্দারা।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সমান অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছিল এই দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা। তাই এই ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে তা কেবল জনপদের নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাহাড়ের জীবনযাত্রায় এখন আশার আলো হয়ে উঠেছে ‘সীমান্ত সড়ক’। আগে যেখানে নিকটবর্তী বাজারে যেতেই লেগে যেত একদিনের বেশি, সেখানে এখন যাতায়াত মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। এতে সহজ হয়েছে উৎপাদিত ফসল ন্যায্য মূল্যে বিক্রি, জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত এবং স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সীমান্ত সড়ক হওয়ায় তাদের জীবন অনেকটাই বদলে গেছে। আগে কেউ অসুস্থ হলে কষ্ট করে অনেক দূর হাঁটতে হতো চিকিৎসার জন্য। এখন সহজেই পৌঁছানো যায়। এছাড়া বাজারঘেঁষা জীবনযাত্রার কারণে স্থানীয় অর্থনীতিতেও এসেছে গতি।
সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসিফ আহমেদ তানজিল বলেন, “শুধু একটি সড়ক নয়, এটি এখন স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্নদ্বার। মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত হওয়ায় জনগণের জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে।”
৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামছুল আলম বলেন, “এখন অন্যান্য সরকারি সংস্থাও (শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ) সরাসরি মাঠে যাচ্ছে। এই সড়কের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা।”
বান্দরবানের ঘুমধুম থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় পর্যন্ত নির্মাণাধীন সীমান্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার। দেশের তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম অঞ্চলে এ সড়ক খুলে দিয়েছে বহুমুখী সম্ভাবনার দুয়ার। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নয়—শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে এই সড়ক।