খেজুর এমন এক আশ্চর্য ফল, যা শুধু রমজান মাসেই নয়—সারা বছরই শরীরের যত্নে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে রয়েছে ফাইবার, পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ অসংখ্য পুষ্টি উপাদান। কিন্তু জানেন কি, সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে খেজুরের উপকারিতা আরও বেড়ে যায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজানো খেজুর শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয় এবং হজম থেকে শুরু করে হার্ট পর্যন্ত সুরক্ষায় রাখে।
খেজুরের রকমারি উপকারিতা রয়েছে। এ কারণে সেই প্রাচীনকাল থেকে সেকালে খেজুর খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদনে পুষ্টিবিদ ঈশাঙ্কা ওয়াহি জানিয়েছেন, শরীরকে সাপোর্ট করতে পারে এমন সহজ অভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সকালে খালি পেটে দুটি খেজুর খাওয়া। এর পুষ্টিগুণ আশ্চর্যজনক কার্যকর। তাহলে জেনে নেয়া যাক, প্রতিদিন সকালে ২টি করে খেজুর খেলে শরীরের পরিবর্তন সম্পর্কে।
প্রতিদিন সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা:
প্রতিদিন সকালে খেজুর খেলে বিভিন্ন উপকার মিলে। এরমধ্য উল্লেখযোগ্য চারটি হচ্ছে- হজম উন্নত করা. শক্তির স্থিতিশীলতা উন্নত করা, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সামগ্রিক সুস্থতায় অবদান রাখা।
প্রাকৃতিক শক্তি বৃদ্ধিকারী খাবার খেজুর:
সকালে পছন্দের পানীয় হিসেবে অনেকেই চা-কফির ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু এতে কয়েক ঘণ্টা পরই শক্তি কমে যায়। যা মূলত পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে ক্যাফিনের ওপর নির্ভর করার জন্য হয়। এ জন্য বিকল্প হিসেবে খেজুর নিতে পারেন। এটি সহজ ও প্রাকৃতিক বিকল্প। গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ থাকে খেজুরে। যা ক্রিটিক্যাল রিভিউ ইন ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশনে প্রতিবেদন করা হয়েছে।
পুষ্টিবিদ ইশাঙ্কা বলেন, খেজুর অতিরিক্ত পরিশ্রম না করেই শরীরে মসৃণ শক্তি বৃদ্ধি করে। ভালো দিক হলো, এই শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়। খেজুর ফাইবার সমৃদ্ধ এবং খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে। এর নিঃসরণ স্থির ও নিয়ন্ত্রিত থাকে, যা হঠাৎ অতিরিক্ত চাপ বা ক্র্যাশ ছাড়াই সকাল পর্যন্ত সতর্ক থাকতে সহায়তা করে।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে খেজুর:
অপ্রত্যাশিত ক্ষুধা বা হঠাৎ মিষ্টি খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া স্বাভাবিক। এ জন্য সকালে দুটি খেজুর খাবার স্থির রাখতে সহায়তা করে। পুষ্টিবিদ ইশাঙ্কা বলেন, খেজুরে থাকা ফাইবারের পরিমাণ হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় পেট ভরে রাখতে সহায়তা করে। এই ক্রামগত ক্ষরণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং অল্প সময়ের মধ্যে নাশতা হিসেবেও এটি দারুণ উপকারী।
এ পুষ্টিবিদ আরও বলেন, হালকা মিষ্টি প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভর না করেই মিষ্টি জাতীয় খাবারের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারে এই খেজুর। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে কিংবা সারাদিন অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার চাহিদা মেটাতেও কার্যকর।
হজম ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:
সকালের রুটিনে দুটি মূল্যবান উপাদান যোগ করে খেজুর। খাদ্যতালিকাগত দিক থেকে ফাইবার এবং গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরকে খাদ্য অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে ভেঙে ফেলতে সহায়তা করে।
পুষ্টিবিদ ইশাঙ্কার পরামর্শ, প্রতিদিন দুটি খেজুর খাওয়া হলে নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা এবং খাবারের পর ধীর হজম বা হালকা অস্বস্তির মতো উদ্বেগগুলো কমে। এর ফাইবারের পরিমাণ ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের প্রতিবেদন অনুযাীয়, খেজুরে থাকা উপাদান অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যা সহায়ক জীবাণুগুলোকে মসৃণ হজম, পুষ্টির শোষণ ও সারাদিন পেটের আরাম উন্নত করতে কাজ করে। পুষ্টিবিদের পরামর্শ, এই ছোট অভ্যাসটি মেনে চললে অন্ত্রে স্থায়ী পুষ্টি পাওয়া যায়, যা দীর্ঘমেয়াদী হজমের সুস্থতা বজায় রাখে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে খেজুর:
পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেজুরে তিনটি অসাধারণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, এর মধ্যে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও ফেনোলিক অ্যাসিড। এই যৌগগুলো কোষগুলোকে দৈনন্দিন জারণ চাপ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে, যা অস্থির অণু যা ফ্রি র্যাডিক্যাল নামে পরিচিত, তার জন্য হয়। এই অভ্যন্তরীণ চাপ কমানোর মাধ্যমে শরীর শক্তিশালী রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে এবং প্রদাহজনক স্তর শান্ত রাখতে সহায়তা করে।
পুষ্টিবিদ ইশাঙ্কার পরামর্শ, খেজুরের বিস্তৃত উপকারিতা দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা বজায় রাখতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও বুদ্ধিমান পছন্দ। খেজুর এমন একটি সুপারফুড, যা সব বয়সীদের জন্য উপযুক্ত খাবার।