আটক পরীক্ষার্থীর নাম কৃষ্ণকান্ত রায়। তিনি বিরল উপজেলার সিঙ্গুল পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত বছর স্নাতক সম্পন্ন করেন। দিনাজপুর শহরের ফকিরপাড়া এলাকায় একটি ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকতেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাকরির পরীক্ষার হলে বারবার কাশি দিচ্ছিলেন কৃষ্ণকান্ত রায়। বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তাকে তল্লাশি চালায় কৃর্তপক্ষ। এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি ডিভাইস। এর মধ্যে একটি তার কানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। অন্যটি যুক্ত ছিল পরনের গেঞ্জির মধ্যে। পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে তাকে তাৎক্ষণিক আটক করেছে পুলিশ।
কেন্দ্র সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে কৃষ্ণকান্ত রায় চাকরির পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা স্বীকার করে জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে ঢাকার একটি চক্র জড়িত রয়েছে। তাদের মাধ্যমে এসব ডিভাইস পেয়েছেন এবং তা নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলেন। যোগাযোগ ডিভাইসের অন্য প্রান্ত থেকে তাকে বলা হয়েছিল, প্রশ্নের সেট ‘পদ্মা’ হলে যেন কাশি দেন। বিষয়টি বুঝে উঠতে না পেরে বারবার কাশি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি।
জালিয়াতির প্রক্রিয়া বর্ণনা করে ওই পরীক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা শুরুর এক থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে চক্রটির হাতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রটি চলে আসে। শহরের ফকিরপাড়া ও সুইহারি এলাকায় দুটি ছাত্রাবাসে কোচিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষক বিভিন্ন সেটের প্রশ্নগুলোর উত্তরপত্র প্রস্তুত করেন। এর মধ্যে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নের সেট নম্বর জেনে নেয় চক্রটি। পরে ক্রম অনুযায়ী প্রশ্নগুলোর উত্তর (ক, খ, গ, ঘ) বলতে থাকে। পরীক্ষার্থী শুনে শুনে তৎক্ষণাৎ প্রশ্নপত্রে বিশেষ দাগ দিয়ে উত্তরগুলো চিহ্নিত করেন। পরে ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল, ওই কেন্দ্রে এক পরীক্ষার্থী ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন, কিন্তু সেটি কোন কক্ষে এবং কোন পরীক্ষার্থী সেটি অস্পষ্ট ছিল। আমরা বিশেষ নজরদারিতে রেখেছিলাম। পরে ১০১ নম্বর রুমের ওই শিক্ষার্থীর আচরণ সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে আমরা তাকে তল্লাশি করে ডিভাইসগুলো উদ্ধার করা হয়।
সূত্র জানায়, আজ শনিবার দিনাজপুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে কমপক্ষে ৫৫ জন ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলেন বলে প্রশাসনের কাছে তথ্য রয়েছে বলেও জানা গেছে।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এক পরীক্ষার্থীকে আমরা হাতেনাতে ধরেছি। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে থেকে তার ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। পুরো চক্রটি ধরতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চলমান রয়েছে।