গ্রেনেড হামলা-মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবর

বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে চার দিন মামলাটির শুনানি হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়েছিল।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, রাসেল আহমেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লাবনী আক্তার। আবদুস সালাম পিন্টুসহ দণ্ডিত বেশ কয়েকজনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান। এছাড়া লুৎফুজ্জামান বাবর সহ আরও তিন আসামীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এছাড়াও বিএনপি নেতৃবৃন্দের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, জাকির হোসেন, ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় অপর ১১ আসামিকে। পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ মামলার আপিল শুনানি বিচারপতি সহিদুল করিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুরু হয়। এর মধ্যে ওই বেঞ্চ পুর্নগঠন হয়। এ কারণে নতুন বেঞ্চে আবার শুনানি শুরু হয়।  

 বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (কারাগারে মারা যান), কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (কারাগারে মারা যান), হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ। পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।  

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ (কারাগারে মারা যান), মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু। তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই’র মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।  

 পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে মামলাটির শুনানি শেষ পর্যায়ে গেলেও সরকার পরিবর্তনের পর গত ৩১ অক্টোবর মামলাটির পুনরায় শুনানি শুরু হয়। তবে শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট।  

 আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.জসিম সরকার। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।  

 

 


  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের টিকিটের মূল্য প্রকাশ, যেভাবে কিনবেন

হত্যাচেষ্টার মামলায় অপু বিশ্বাসের জামিন

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ

সেনা কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন

নীরব ঘাতক ফুসফুুুুসের ক্যানসার, যেসব লক্ষণ বিপদের সংকেত দিচ্ছে

মিটফোর্ডে শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’ ঘোষণা

দুই মাসে ৬ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে কুয়েত

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত

দুপুরের মধ্যে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১০

আবু সাঈদ হত্যা ও ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা: আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির

১১

‘অন্যায়কারী যেই হোক, আমরা প্রশ্রয় দেব না’

১২