অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চারটি সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি করা হবে। মতৈক্যের ভিত্তিতে এটি হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার। নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে সরা যাবে না।
বুধবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এসব প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের সদস্যরা। এরপর বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বহু ধরনের কমিটি হয়, রিপোর্ট প্রকাশ হয়, আনুষ্ঠানিকতা হয়; কিন্তু আজকের আনুষ্ঠানিকতা সেগুলোর চাইতে অনেক ঊর্ধ্বে। আজকের এ ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই এ কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে।
একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে, মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেখান থেকেই ইতিহাসের সৃষ্টি, আজকের এ অনুষ্ঠান সেই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো প্রতিবেদন নয়।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বিচ্ছিন্ন কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ যে প্রতিবেদনগুলো হাতে নিলাম, অবশ্যই এটা আমাদের দেশের জন্য বড় একটি চর্চা। কেউ সেটা অস্বীকার করবে না।
একটা নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে সেটার কাঠামো তৈরির কাজ কমিশনগুলোর হাতে দেওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বপ্ন আছে এখনও, সেই স্বপ্নের রূপরেখাগুলো তুলে ধরতে হবে। এটা শেষ নয়, একটা অধ্যায়ের শুরু হলো। স্বপ্ন এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী তার যে যাত্রা, সেটা শুরু হলো। এর বড় একটি অংশ এ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হবে যে আমরা কী করতে চাই। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা শুরু করব। সবার মন এতে সায় দিচ্ছে কি না; অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কি না-এসব আলোচনার রসদ আপনারা তৈরি করে দিয়েছেন।
আগামীতে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনায় কমিশনের সদস্যরাই নেতৃত্ব দেবেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। তার মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, যার উদ্দেশ্য হলো এটা গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। ওই যে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার, সেরকম চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে যাবে না। এই চার্টার থেকে যাবে, ইতিহাসের অংশ হিসেবে এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনও দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা আশা করছি, সব দল এই চার্টারে সাইনআপ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচনও এই চার্টারের একটা অংশ হবে, ঐকমত্যের নির্বাচন হবে। সেটি না হলে চার্টার হারিয়ে যাবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুদার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন। এসময় সংশ্লিষ্ট কমিশনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
(বিনিউজ/১৫জানুয়ারি/এমআই)