রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সমাবর্তনে ৬০, ৬১ ও ৬২তম ব্যাচের মোট ৫ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এতে অতিথি ও গ্র্যাজুয়েটদের আসন গ্রহণ, শোভাযাত্রা, স্বাগত বক্তব্য, ডিগ্রি প্রদান ও গ্রহণ, শুভেচ্ছা বক্তব্য এবং সভাপতির বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। দুপুর আড়াইটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
দ্বাদশ সমাবর্তনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন- পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং সমাবর্তন বক্তা ছিলেন- বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, ‘আজকের দিনটি শুধু শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত অর্জনের স্বীকৃতি নয়; এটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত জ্ঞান ও মূল্যবোধের সম্মান। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পেশাগত দক্ষতা অর্জনের স্থান নয়, বরং নৈতিকতা, বিবেক ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সেই চেতনাকে সামনে রেখে এই সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যায় ও নৈতিকতার পক্ষে অবস্থান নিতে সক্ষম মানবসম্পদ গড়ে তুলতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায় ও দৃঢ়তাকে তাদের জীবনের অন্যতম বড় অর্জন। এ সময় তিনি জুলাই ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
পাশাপাশি স্নাতকদের বাবা-মা, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সমাবর্তনের আয়োজন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘সমাবর্তনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রক্টরিয়াল টিম হিসেবে কাজ করছেন। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ, প্রক্টরিয়াল টিম ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এরপর ১৯৫৯, ১৯৬১, ১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭০ সালে একাধিক সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ২৮ বছর বিরতির পর ১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর অধ্যাপক আব্দুল খালেক উপাচার্য থাকাকালীন সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে অষ্টম সমাবর্তন, ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের উপাচার্যত্বে নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দশম এবং ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর একাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। একাদশ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সর্বশেষ দুইটি সমাবর্তনের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান।